নোট: আহলে হাদিস (সালাফি) ও মাদখালি সালাফিদের নিয়ে লেখা
আহলে হাদীস বা আহল-ই-হাদীস (ফার্সি) বা আসহাবুল হাদীস (আরবি: Ahl al-ḥadīth; أهل الحديث বা Aşḥāb al-ḥadīth; أصحاب الحديث) এর শাব্দিক অর্থ হল হাদীস বিশেষজ্ঞ। পারিভাষিক অর্থ, যারা হাদীস সংরক্ষণ করেছেন এবং গবেষণা করেছেন। হাদীসের শাব্দিক অর্থ হল বাণী। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তা'আলা নিজেই কুরআনকে হাদীস বলে সম্বোধন করেছেন। অর্থাৎ হাদীস বলতে সম্মিলিতভাবে কুরআন ও সুন্নাহ উভয়টিই বোঝায়। আর যারা কুরআন ও সুন্নাহ তথা হাদিসের নিরপেক্ষ অনুসারী, তাদেরকে বলা হয় আহলে হাদীস। আলেমদের অভিমত, এরা হল মুসলিম উম্মাহর মধ্যকার এমন একটি দল যারা কুরআন এবং হাদীসের অনুসরণে মৃত্যু বরণ করেছেন। আজকাল অনেকেই নিজেদের আহলে হাদীস (আহল আল-হাদীস) বা সালাফি বলে দাবি করলেও, অনেকেই আবার একে ওয়াহাবি আন্দোলনের একটি প্রকরণ বলে দাবি করেন এবং এর অনুসারীদের ওয়াহাবি নামে চিহ্নিত করেন। তারা প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ইমাম, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফি, ইমাম হাম্বল সহ সকল মুজতাহিদগণের ফতোয়াকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন, তবে কোনো একটি নির্দিষ্ট মাযহাব বা ইমামের মতামতকে এককভাবে অনুসরণ করেন না।
তাদের আরো বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, তারা কুরআন এবং সহিহ হাদীসকে সর্ব প্রথম অনুসরণ করেন এবং শুধুমাত্র অস্পষ্ট বিষয়গুলোতে ইমামগণ অর্থাৎ মুজতাহিদদের ফতোয়া পর্যালোচনা করে গ্রহণ করেন। আলেমগণ হাদীস শাস্ত্রের বিভিন্ন পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে হাদীসের সনদ যাচাই বাছাইয়ের পর সহীহ, দুর্বল, জাল এভাবে হাদীসের শ্রেণি বিভাগ করেন।
সালাফি আন্দোলন (আরবি: سلفية) সুন্নি ইসলামের অন্তর্ভুক্ত একটি আন্দোলন। এটি সালাফিবাদ নামেও পরিচিত। সালাফি আন্দোলনকে বিপক্ষ দলগুলো ওয়াহাবিবাদ বলে। কারণ এই আন্দোলনে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের বিশেষ অবদান আছে। সালাফিরা মাজারকেন্দ্রিক কর্মকান্ডের বিরোধীতা করে। সালাফিবাদে ইসলামের আক্ষরিক, কঠোর ও বিশুদ্ধ চর্চা এবং বিশেষত সালাফ তথা ইসলামের প্রথম যুগের চর্চার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। সালাফিবাদ অন্যতম প্রভাবশালী ও দ্রুত বর্ধনশীল ইসলামি মতাদর্শ। অধিকাংশ সালাফী হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। তাদের অনেকে নির্দিষ্ট কোন মাযহাব এর অনুসরণ করে না। শারয়ী বিষয়ে সালাফিদের সাথে অন্যান্য মতালম্বি মুসলিমদের মতপার্থক্য রয়েছে। তারা শবে বরাত, ঈদে মিলাদুন্নবী ইত্যাদিকে ইসলামে যোগ হওয়া নতুন জিনিস হিসেবে বিশ্বাস করে এবং এগুলো উৎযাপন করে না।
“সালাফ” শব্দের অর্থ হলো পূর্বসূরী। ইসলামী পরিভাষায় সালাফ বলতে ইসলামের প্রথম তিন প্রজন্মের মানুষদেরকে বুঝানো হয়। অর্থাৎ সাহাবী, তার পরবর্তী প্রজন্ম তাবিঈ ও তার পরবর্তী প্রজন্ম তাবা তাবিঈ। এই তিন প্রজন্মের হিদায়াতপ্রাপ্ত মানুষরাই হলেন আমাদের সালাফ। আর সালাফদের যারা অনুসরণ করবে তারা হল সালাফি। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, সালাফদের পরিপূর্ণ অনুসরণ করার মাধ্যমেই আমরা সঠিক ইসলামি পথের সন্ধান পেতে পারি। আমরা কখনোই প্রকৃত সালাফিদের ঘৃণা করি না, বরং যারা সালাফি নামটি ব্যবহার করে সাধারণ মুসলিমদের ধোকা দিচ্ছে আমরা শুধুমাত্র তাদের বিরোধিতা করছি।
বর্তমান যুগে একটি দল নিজেদের সালাফি দাবি করলেও অনেক ক্ষেত্রে তারা সালাফদের প্রদর্শিত পন্থা পরিহার করে নির্দিষ্ট কিছু শাইখদের অন্ধ অনুসরণ করছে। এমনই একটি দল হচ্ছে মাদখালি সালাফি। ইথিওপিয়ার আলেম মুহাম্মাদ আমান আল জামি এবং ইয়েমেনের আলেম রাবি আল মাদখালি এর বিভ্রান্তিকর মানসিকতার অন্ধ অনুসারী হচ্ছে মাদখালি সালাফি নামক এই দল। আমাদের দেশে এ দলটি মূলত নিজেদের “আহলে হাদিস” বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। শিরক বিদ’আত সম্পর্কিত কিছু ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম প্রশংসার যোগ্য হলেও ইসলামের মৌলিক কিছু বিষয়ে তাদের বিভ্রান্তি ও গোঁড়ামি ধীরে ধীরে স্পষ্টরূপে প্রকাশিত হচ্ছে।