85 বার প্রদর্শিত
in বাংলাদেশ করেছেন

1 উত্তর

0 পছন্দ 0 জনের অপছন্দ
করেছেন
বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক, সুচতুর আইনজ্ঞ, বাগ্মী হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। গণতন্ত্রের সংগ্রামে তিনি ছিলেন নির্ভীক সেনানী। তার মতে, জনগণের ক্ষমতাই প্রকৃত ক্ষম তা। এ ক্ষমতাকে সংগঠিত করতে যিনি সক্ষম হবেনতিনিই একমাত্র রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকার লাভ করবেন। এটাই ছিল তার মহান শিক্ষা। প্রকৃত প্রস্তাবে সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমেই তিনি জনগণের মুক্তি আনতে চেয়েছিলেন।

রাজনৈতিক অবদান (Political Contribution):

১. খেলাফত ও স্বরাজ আন্দোলন : ১৯২০ সালের স্বরাজ ও খেলাফত আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত। এ সময় তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সান্নিধ্যে আসার সুযােগ লাভ করেন। মাওলানা মােহাম্মদ আলী ও মাওলানা শওকত আলী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখের নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলন এবং মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযােগ অন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২. বেঙ্গল প্যাক্ট : হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলেন, ভারতীয় মুসলিম ও হিন্দু জাতির ঐক্য ছাড়া মুক্তির কোনাে বিকল্প পথ নেই। দেশবন্ধুর একান্ত ঘনিষ্ঠতায় আসার ফলে তার এবং শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় স্বাক্ষরিত হয় 'বেঙ্গল প্যাক্ট বাংলার এ তিনজন অসাধারণ মহাপুরুষ 'বেঙ্গল প্যাক্টের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম মিলনের সেতুবন্ধন রচনা করেছিলেন।

৩. মুসলিম লীগ সংগঠন : ১৯৩১ সালে হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী 'নিখিল ভারত মুসলিম যুব সংস্থা' গঠন করেন। ১৯৩২ সালে কলকাতায় 'নিখিল ভারত মুসলিম লীগ অধিবেশনের আহ্বায়ক সমিতির সভাপতি হন। অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতার জন্য তাকে মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারি বাের্ডের সেক্রেটারি নিযুক্ত করা হয় এবং ১৯৩৭ সালের নির্বাচনি যুদ্ধের দায়িত্বভার তার ওপর অর্পণ করা হয়।

৪. অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রিত্ব : আজীবন গণতন্ত্রের পূজারি সােহরাওয়ার্দীর অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও সাংগঠনিক শক্তির বলে ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ বিপুল সাফল্য অর্জন করে। এ সময় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের তিনি ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন সবচেয়ে প্রভাবশালী মন্ত্রী। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের একচ্ছত্র বিজয়ের মূলে ছিলnসােহরাওয়ার্দীর গণতন্ত্রের প্রতি নিষ্ঠা ও তার ব্যক্তিগত যােগ্যতার স্বাক্ষর।

৫. বাংলার অখণ্ডতা রক্ষার সংগ্রাম : ভারত বিভাগ পরিকল্পনায় বাংলা ও পাঞ্জাবকে বিভক্ত করে পূর্ব পাঞ্জাব ও পশ্চিম বাংলাকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার নিখিল ভারত মুসলিম লীগের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি জোরালােভাবে প্রতিবাদ ও বিরােধিতা করেন। তিনি তৎকালীন মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম ও কংগ্রেস নেতা শরৎ বােসের সাথে মিলিতভাবে বাংলার অখণ্ডতা রক্ষার জোর প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। কিন্তু মি. জিন্নাহ ও নাজিমউদ্দিনের কূটকৌশলের কারণে বাংলার অখণ্ডতা বজায় রাখা সম্ভব হয় নি।

৬. আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা : দেশবিভাগের পর ১৯৪৯ সালে তিনি পাকিস্তানে ফিরে আসেন। মুসলিম লীগ নেতৃত্বের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াইকে মজবুত করার জন্য তিনি পাকিস্তান ওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন। মওলানা ভাসানীও ১৯৪৯ সালে মুসলিম আওয়ামী লীগ নামে একটি দল গঠন করেন। উভয় রাজনৈতিক দল ১৯৫৩ সালে এ দলের নাম পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যৌথ দল গঠনের উদ্দেশে সােহরাওয়ার্দী আহ্বায়ক মনােনীত হন। ১৯৫৫ সালে এ দলের নাম পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের পরিবর্তে মুসলিম' কথাটি বাদ দিয়ে পাকিস্তান আওয়ামী লীগ রাখা হয়।

৭. ১৯৫৪ সালের নির্বাচন : ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে নির্বাচনের তারিখ ঘােষণার সাথে সাথে সােহরাওয়ার্দী মুসলিম লীগের স্বৈরশাসনের অবসানকল্পে কৃষক-শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম ও গণতন্ত্রী দলের সাথে এক ফ্রন্ট গঠন করেন। ফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি এবং হক, ভাসানী, সােহরাওয়ার্দীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও নির্বাচনি প্রচারণার ফলে সমস্ত পূর্ব পাকিস্তানবাসী ফ্রন্টর পতাকাতলে সমবেত হয়। ফলে ৩০৯টি আসনের মধ্যে মুসলিম লীগ মাত্র ৯টি আসনে জয়লাভ করে এবং ২২৩টি আসনে যুক্তফ্রন্ট জয়যুক্ত হয়। অবশিষ্ট ৭৭টি আসনের মধ্যে ১টি পায় খেলাফত রাব্বানী পার্টি, ৪টি নির্দলীয় সদস্য এবং বাকি ৭২টি আসন হিন্দুদের জন্য সংরক্ষিত ছিল ।

৮. গণতন্ত্রমনা : গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি সােহরাওয়ার্দীর ছিল অসীম শ্রদ্ধাবােধ। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, জনগণই রাজনৈতিক শক্তির উৎস। জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক । গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিশ্বাসী ছিলেন বলেই তিনি বলতেন, বুলেটের চেয়ে ব্যালটই শক্তিশালী। আর এ কারণেই তাকে 'গণতন্ত্রের মানসপুত্র' বলা হতাে।

৯. গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তার রাজনৈতিক ভূমিকা : তিনি মনে করতেন, জনগণের ক্ষমতাই বড় ক্ষমতা। এ ক্ষমতাকে সংগঠিত করতে যিনি সক্ষম হবেন তিনি একমাত্র রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকার লাভ করবেন। প্রকৃত প্রস্তাবে সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমেই তিনি জনগণের মুক্তি আনতে চেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক, সুচতুর আইনজ্ঞ, অন্যদিকে তীক্ষ্ণধী সম্পন্ন বক্তা ও সর্বজনমান্য জননেতা।

১০. প্রধানমন্ত্রী হিসেবে : ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়ে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাণবন্ত করতে দৃঢ়সংকল্প হন। নির্বাচন অনুষ্ঠান, জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা, নিরপেক্ষ প্রশাসন, গণদাবির প্রতি শ্রদ্ধা এ চেতনায় তিনি উদ্বুদ্ধ ছিলেন। কিন্তু বেশিদিন তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন নি। ১৯৫৭ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।

১১. বিরােধী দলের নেতা হিসেবে : ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে এবং সামরিক শাসকবৃন্দ অগণতান্ত্রিক মৌলিক গণতন্ত্র' প্রতিষ্ঠা করলে তিনি নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তােলেন। তার মতে, শাসনব্যবস্থায় জনগণের রায় শেষকথা। এ জন্যই সামরিক শাসকগণ তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন।

সম্পর্কিত প্রশ্নগুচ্ছ

1 উত্তর
21 সেপ্টেম্বর 2020 in বাংলাদেশ জিজ্ঞাসা করেছেন Anisa Islam
1 উত্তর
1 উত্তর

20,749 টি প্রশ্ন

22,833 টি উত্তর

454 টি মন্তব্য

1,250 জন সদস্য

বিভাগসমূহ

...